পার্বত্য বান্দরবান জেলার সবচেয়ে জনবহুল ও প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরা জনপদ লামা উপজেলা। পার্বত্য এ উপজেলা বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। উঁচু নীচু পাহাড়, পর্বত নদ-নদী, উর্বর উপত্যকা আর দুর্গম চিরহরিৎ বনভূমি লামা উপজেলাকে দান করেছে এক অনন্য নৈসর্গিক সৌন্দর্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে উপজাতি ও বাঙালিদের মধ্যে নানান বিষয়ে মত বিরোধ এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও লামায় এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। শান্তিকামী ও পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে লামার সুনাম,খ্যাতি ও ঐতিহ্য রয়েছে সর্বমহলে। একই সাথে এই উপজেলার জনসাধারণের মাঝে রাজনৈতিক স্থিরতা রয়েছে। রাজনৈতি প্রতিহিংসাকে পরিহার করে নিজেধের সম্প্রীতিকে বজায় রাখতে চেষ্টা করে এখানকার জনসাধারণ।
লামার পূর্ব নাম ছিল হ্লামা, এটি মারমা ভাষায়, বাংলায় এর প্রতিরূপ ‘‘সুন্দরী নারী’’। সহজ বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখতে গিয়ে লামা হিসেবে রূপান্তরীত হয়। হ্লামা নামক এক সুন্দরী নারীর রূপে, গুণে, সৌন্দর্যে, উদারতা ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে প্রথমে এর নাম দেয়া হয় হ্লামা। পরে পর্যায় ক্রমে লামা খাল, লামা মুখ, লামা বাজার, লামা মৌজা, ও সর্বশেষ এ থানার নাম করণ করা হয় লামা। জনশ্রুতি আছে, পার্শ্ববর্তি মিয়ানমার থেকে ১৭০০ সালের শেষের দিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক মারমা রাজকুমারী সাগর, পাহাড়, দুর্গম পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফ হয়ে কক্সবাজারে এসে অবস্থান নেয়। এর পর সেখান থেকে রামু, হারবাং, ফাইতং, কুমারী ও মানিক পুর অতিক্রম করে লামা মাতামুহুরী নদীর পাশে সুখ্যা-দুঃখ্যা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নেয়। মাতামুহুরীর এ বালি চরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বেড়াতেন এ রাজকুমারী। এ সময় মাঝে মাঝে চিন্তায় মগ্ন থাকতেন আবার কখনও আনন্দ উল্লাশ করতেন। এ রাজকুমারী অনেক ধনসম্পদের মালিক ছিল। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে এ রাজ কুমারী মিয়ানমার থেকে পুরোহিত এনে একটি উপসানালয় নির্মাণ করান। যার বর্তমান নাম লামা সাবেক বিলছড়ি মহামুনি বৌদ্ধ বিহার। এদিকে লামা নাম করণ নিয়ে আরও মতভেদ আছে। লামা উপজেরার বুক চিড়ে মাতামুহুরী নদী পাশ্ববর্তি চকরিয়া উপজেলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় লামা শব্দের বাংলায় অনুরূপ শব্দ নীচের দিকে। মাতামুহুরীর নদীর পানি এক ভাবে নীচের দিকেই প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীতে কোনো জোয়ার নেই। এ নদীর পানি নীচের দিকে প্রবাহিত হওয়ার কারণে এর নাম করণ করা হয় লামা। তবে মারমা লামার নাম করণ নিয়ে মারমা রাজকুমারীর পক্ষেই বেশি মতামত পাওয়া যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস